ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। এমনটি জানালেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগ্লু। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুতকে বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে ‘গেজেট দুভার’।
মেভলুত জানান, গত বছর মাদুরো তাকে বলেছেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারেন। বৃহস্পতিবার তুরস্কের আলিনিয়া শহরে অবস্থিত আলাদ্দিন কেইকুবাত বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেয়ার সময় মেভলুত বলেন, মাদুরো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে মাদুরোর সঙ্গে বৈঠক হয়। ওইসময় ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে নির্মিত টিভি সিরিজ ‘আরতুগ্রুল’ দেখার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন মাদুরো।
‘বৈঠকের সময় সিরিজ নিয়ে কথা হলে মাদুরো চিৎকার করে দাঁড়িয়ে উঠেন, এবং ‘আরতুগ্রæল’ সিরিজের সব চরিত্রের নাম বলতে বলতে বসে যান।’ মেভলুত জানান, মাদুরো সেসময় বলেছেন, এই সিরিজগুলো ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দেয়, এবং সিরিজগুলোকে ধন্যবাদ, একদিন আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত আরো বলেন, আমরা মাদুরোর মুখ থেকে এমন কথা শুনে অনেক আনন্দিত। তবে ঠিক কবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন মাদুরো সে সম্পর্কে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ভেনিজুয়েলায় চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।
জেনে নিই কে এই মাদুরো :
নিকোলাস মাদুরো মরোস (স্পেনীয়: Nicolás Maduro Moros; স্পেনীয় উচ্চারণ: [nikoˈlaz maˈðuɾo ˈmoɾos]; জন্ম: ২৩ নভেম্বর, ১৯৬২) ভেনেজুয়েলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসীন রয়েছেন। পূর্বে তিনি ভেনেজুয়েলার উপ-রাষ্ট্রপতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হুগো চাভেজের মৃত্যুজনিত কারণে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন। ১৪ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হন মাদুরো।
প্রারম্ভিক জীবন: একজন শ্রমিক নেতার পুত্র নিকোলাস মাদুরাই ভেনেজুয়েলার কারাকাসে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালে। এল ভ্যাল রাজ্যের লিসিও জোস আভালোসের সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন যা কর্মজীবি-শ্রেণীর সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত।রাজনীতির সাথে প্রথম সংযুক্ত হন ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্র সংঘের সদস্য হবার মাধ্যমে।
রোমান ক্যাথলিক হিসেবে বড় হতে থাকেন মাদুরো। পৈতৃকসূত্রে তাঁর পরিবার সেফার্দিক ইহুদি বংশোদ্ভূত। এছাড়াও তিনি সত্য সাই বাবা আন্দোলনের সাথে জড়িত আছেন ও সত্য সাই বাবা’র একনিষ্ঠ পরম ভক্তরূপে পরিচিত।
ব্যক্তিগত জীবন : কোজেডস রাজ্যের টিনাকুইলো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সিলিয়া ফ্লোরেস নাম্নী এক আইনজীবি ও রাজনীতিবিদকে মাদুরো বিয়ে করেন। ফিফথ রিপাবলিক মুভমেন্ট (এমভিআর)-এর রাজনীতিবিদ হিসেবে ফ্লোরেসকে মাদুরো আগস্ট, ২০০৬ সালে জাতীয় পরিষদের স্পিকাররূপে নিযুক্ত করেন।
তিনি হচ্ছেন ভেনেজুয়েলার প্রথম নারী, যিনি ২০০৬ থেকে ২০১১ মেয়াদে জাতীয় পরিষদে সভাপতিত্ব করেছেন।বর্তমানে ফ্লোরেস ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করছেন। মাদুরো-ফ্লোরেস দম্পতিকে ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে শক্তিশালী দম্পতিরূপে চিহ্নিত করা হয়।
রাজনৈতিক জীবন: মাদুরো কর্মজীবনে প্রবেশ করেন সাধারণ একজন বাস চালক হিসেবে। এরপর তিনি শ্রমিক সংঘের নেতা হন। ২০০০ সালে ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুগো চাভেজের সরকারের শাসন আমলে তিনি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ঘটনা পরম্পরায় ২০০৬ সালে তিনি ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এসময়ে তাঁকে ‘সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে চাভেজের সবচেয়ে কাছের ব্যক্তিরূপে’ মনে করা হতো।
৯ আগস্ট, ২০০৬ তারিখে মাদুরো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরূপে নিযুক্ত হন। রোরি ক্যারলের মতে, মাদুরো বিদেশী ভাষায় কথা বলতে পারেন না। পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি সরকারের কাছ থেকে সুন্দর বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে ব্যাপক সহায়তা পান। এছাড়াও, ২০১০ সালের কলম্বিয়া-ভেনেজুয়েলার মধ্যকার বিচ্যুত কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়াস চালান তিনি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০১৩: ৫ মার্চ, ২০১৩ তারিখে চাভেজের মৃত্যুর পর নিকোলাস মাদুরো ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার কাঁধে নেন। তবে, চাভেজের মৃত্যুর ফলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আরোহণের মাধ্যমে তিনি ভেনেজুয়েলার সংবিধানের ২২৯, ২৩১ ও ২৩৩নং ধারা ভঙ্গ করেছেন বলে বিরোধী দলীয় নেতারা অভিযোগ তোলেন।
২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে অনুষ্ঠিত বিশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি নতুন রাষ্ট্রপতিরূপে অত্যন্ত স্বল্প ১.৫% ভোটের ব্যবধানে সরাসরি নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি ইউনাইটেড সোশ্যালিষ্ট পার্টির পক্ষবলম্বন করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন। তাঁর প্রধান ও একমাত্র নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মিরান্ডার গভর্নর হেনরিক ক্যাপ্রিলস।
তবে, সাংবিধানিকভাবে তাঁর ক্ষমতায় আরোহণ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের ফলে বিরোধী দল থেকে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ক্যাপ্রিলস ও তাঁর সমর্থকেরা পুণরায় ভোট গণনার দাবী জানান ও নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন।