সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ-ভয়াবহ পরিণতির দিকেই যাচ্ছে বাংলাদেশ!

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৬ মে, ২০২০
  • ৩২৭ Time View

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের যে হার প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে করোনার সংক্রমণ নাগালের বাইরে চলে গেছে। শুধু হারের কারণ নয়, বাংলাদেশে যখন করোনার পিক সিজন শুরু হলো, তখনই সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানোর যে কঠোরতা আরোপ করা উচিত ছিল তার বিপরীত অবস্থায় আমরা গেছি।

সামাজিক মেলামেশার ব্যাপারে আমরা শিথিলতা করেছি। গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়েছে, শপিং মল খুলে দেওয়া হচ্ছে, দোকান পাট খোলা হয়েছে। কার্যত সামাজিক দূরত্বের বা লকডাউনের চিহ্নমাত্র নেই। এর ফলে করোনা পরিস্থিতির একটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে বাংলাদেশ যাচ্ছে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টার যে ফলাফল সেটিও আতঙ্কজনক ও উদ্বেগজনক। গত এক দিনে ৫ হাজার ৭১১ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শতকরা হারে যদি আমরা দেখি তাহলে দেখবো যে ১৩.৭৬ হারে মানুষ করোনায় শনাক্ত হয়েছে।

এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৩ হাজার ৩৫২ জনের। তাতেই যদি আমরা হিসেব করে দেখি যে, ১১.৭০ হারে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ হয়েছে। আমাদের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার পর থেকে প্রায় ২ মাসে যদি হারটা দেখি, সেটাও উদ্বেগজনক।

কারণ দুই মাসে ধারাবাহিকভাবে ১০ এর উপর সংক্রমণের হার। এটা কেবল মহামারীর ইঙ্গিত বহন করে না, দীর্ঘমেয়াদী করোনা সংক্রমণের বার্তাও নিয়ে আসে। দীর্ঘমেয়াদী এই জনস্বাস্থ্যের সংকট যদি বাংলাদেশে থাকে, তাহলে আমাদের সার্বিক অবস্থা একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে।

বাংলাদেশ যে খুব বেশি বেশি পরীক্ষা করছে, তেমনটিও নয়। বরং উল্টোভাবে বলা যায় যে, বাংলাদেশ পরীক্ষার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর একটি। যেখানে ভুটানে প্রতিদিন পরীক্ষা হচ্ছে ১৪ হাজার ২৩০ জনের, সেখানে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ হাজারের আশেপাশে পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থাটা যদি দেখি, ভারতে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার ৮০২ জন পরীক্ষার আওতায় এসেছেন। পাকিস্তানে মোট ১০ লাখ জনসংখ্যার ৯৬২ জন পরীক্ষার আওতায় এসেছে। অথচ বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে পরীক্ষা হয়েছে ৫৩২ জনের।

এই কম পরীক্ষার পরও করোনার যে পরিস্থিতি, সেটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছেন না। তারা বলছেন যে, এখন করোনার পিক সিজন শুরু হয়েছে। এই অবস্থাটা চলতে পারে পুরো মে মাস পর্যন্ত। এই সময়েই লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব আর সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কঠোরভাবে আরোপ করা দরকার ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কারণ এখন স্পষ্টতই যে, বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে। সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে গেলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ছাড়া আর কোনো ওষুধ নেই। কাজেই এখন দরকার ছিল, সামাজিক সংক্রমণ যত কম বিস্তৃত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সামাজিক সংক্রমণকে ঠেকিয়ে রাখা বা সামাজিক সংক্রমণকে বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা। কিন্তু আমরা যেন সামাজিক সংক্রমণকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

ইতিমধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এবং গার্মেন্টস কারখানাগুলো খোলা হচ্ছে। গার্মেন্টসে যেভাবে শ্রমিকরা ঢুকছেন, বেরুচ্ছেন এবং পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যাচ্ছেন। আবার অন্যদিকে দোকানপাট খোলা রাখা হয়েছে এবং ১০ মে থেকে শপিং মলগুলো খুলে দেওয়া হবে ঈদের কারণে। এরকম পরিস্থিতিতে করোনার সামাজিক সংক্রমণের একটি ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ সরকার সম্ভবত বুঝতে পারছে না যে করোনার তাণ্ডবটা কত ভয়াবহ হতে পারে। তারা হয়তো এক ধরনের আত্মপ্রসাদের মধ্যে আছেন। কিংবা একটি ভুল চিন্তা জগতে বসবাস করছেন।

বাংলাদেশে যত স্বল্প পরীক্ষায় যেভাবে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে, এটা যদি মে মাসেও চলে তাহলে যে অবস্থা হবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নেই। এখন সামাজিক সংক্রমণটা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করাও প্রায় অসম্ভব। কাজেই করোনা পরিস্থিতি এখন আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে এটা বলাই যায়।

করোনা যেকোনো দেশে স্বাভাবিকভাবে একটা চূড়ান্ত অবস্থায় যায়, তারপর আস্তে আস্তে নিম্নগামী হয় এবং আস্তে আস্তে এটা থেমে যায়। বাংলাদেশে এখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য বা সামাজিক দূরত্বের ফর্মুলায় কাজ হবে না। শুধুমাত্র নিয়তির উপর ছেড়ে দিতে হবে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin