বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

১০ লাখ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে সৌদি আরব

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩ মে, ২০২০
  • ৫৯৬ Time View

যে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন, তার বড় অংশই রয়েছে মধ্যপ্রচ্যে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশ বাংলাদিশদের ফেরত পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে। এরমধ্যে শুধু সৌদি আরবই ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে। এপ্রিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘মধ্যপ্রচ্যের শ্রমবাজারের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বিশেষ করে সৌদি থেকে কত শ্রমিক ফেরত আসবে তা ভাবতেও পারছি না। সৌদি সরকার বাংলাদিশদের ফেরত আনার বিষয়ে তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের বলেছি, আমরা এক সঙ্গে এত লোক আনতে পারবো না। আমরা আমাদের নাগরিক অবশ্যই নিয়ে আসব। তবে ধাপে ধাপে আনতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘৭০ শতাংশ সৌদি নাগরিককে কর্মক্ষেত্রে আনা সৌদি সরকারের অনেক দিনের পরিকল্পনা। এটা তারা প্রতিবছর ৫ শতাংশ করে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সৌদির মানুষতো কাজ করে না, তাদের পাওয়াও যায় না। যদিও বর্তমানে সৌদির কিছু লোক কাজে যোগ দিচ্ছেন। তবে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সৌদির অর্থনীতি কিছুটা কঠিন অবস্থায় রয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশগুলোতে আগামীতে আমাদের শ্রমিকের চাহিদা কমবে।’ ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আনডকুমেন্টেটেড ও অবৈধ কর্মীদের নিবন্ধন করতে বলেছে। নিবন্ধন করলে আর কোনো জরিমানা দিতে হবে না। দেশে ফিরতেও খরচ লাগবে না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তাদের ফেরত পাঠাবে। এর ফলে বাংলাদেশিরা দলে বেধে নিবন্ধন করছে। নিবন্ধনের পরে তাদের ক্যাম্পে রেখে দিচ্ছে। সেখান থেকে দেশে ফিরতে তারা বাধ্য। এছাড়া ছোটখাটো অপরাধে জেলে থাকা প্রবাসীদের ক্ষমা করে জেল থেকে সোজা বিমানে তুলে দিচ্ছে। ফলে বিরাট সংখ্যক লোক আসছে।’

তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বলা হয়েছে, জেলে থেকে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের তথ্য দিতে হবে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক কি না তা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে গ্রহণ করা হবে। তবে সৌদি আরব কৃষিতে মনযোগী হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি সরকার কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে সামনের দিনে যথেষ্ট উদ্যোগ নেবে। এগুলোর সঙ্গে মৎসখাতে উদ্যোগ যদি নেয় তাহলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের এ খাতগুলোতে নিয়োগ করা যেতে পারে। সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে দেশটিতে থাকা বৈধ ও অবৈধ অন্য দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি সরকার। আর সে হিসেবে ২০১৯ সালের শেষ দিকে সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ, হুরুব হয়ে যাওয়া, অবৈধ, অনিবন্ধিত বাংলাদেশিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে।

দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভাগ করে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের আহ্বান জানানো হয়। তখন থেকেই সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট প্রতিনিয়ত এসব বাংলাদেশিদের তালিকা প্রণয়নে কাজ করছে। এখন আবার সাধারণ ক্ষমা করে আবারো বৈধ হওয়ার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সৌদি সরকার। এ প্রেক্ষাপটে সৌদিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস আশংকা করছে যে এবার ৫-১০ লাখ বাংলাদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ ধরনের তথ্য সৌদিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে। তবে সূত্র জানায়, ৫-১০ লাখ বাংলাদেশিকে একসঙ্গে ফেরত পাঠাবে না সৌদি। আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে ফেরত পাঠানো হবে।

এর অন্যতম কারণ, সৌদি আরবের ২০৩০ ভিশন অনুযায়ী পুরো সৌদির শ্রম বাজারে ৭০ শতাংশ সৌদি নাগরিক কর্মক্ষেত্রে আনার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। এটি বাস্তবায়নে সব দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বাধামূলক ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে সৌদি সরকার। বিদেশি কর্মীদের পরিবারের উপর মাসিক চার্জ আরোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ইকামার ফি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে টিউশন ফির পাশাপাশি কর বাড়ানো হয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে মিশরের ১১ লাখসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা সৌদি ছেড়েছেন। অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও সৌদি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার বেশিরভাগই পেশাজীবী। উল্লেখ্য, সৌদির মতো কাতার, ইরাক, বাহারাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছে। কয়েকটি দেশ থেকে ইতিমধ্যে কিছু বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin