মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন

সামনে এলো করোনার আরও ভয়ঙ্কর রূপ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০
  • ১১৪৪ Time View

চার মাস ধরে চলছে মানুষ বনাম ভাইরাস বিশ্বযুদ্ধ। তবে করোনা ভাইরাসকে খালি চোখে দেখা যায় না। করোনায় এখন পর্যন্ত দুই লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩০ লাখেরও বেশি। গবেষণাগারে চলছে করোনার প্রতিষেধকের খোঁজ। কিন্তু তার জন্য আণুবীক্ষণিক শত্রুটিকে ভাল করে চেনা প্রয়োজন। সেই কাজটি করেছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী।

এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির ১১টি টাইপ বা ধরন সস্পর্কে জানা গেছে। তার মধ্যে সব চেয়ে সংক্রামক ভাইরাস টাইপটিকে চিহ্নিত করলেন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স-এর দুই বিজ্ঞানী নিধানকুমার বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম মজুমদার। কেন সেটি এতটা সংক্রামক, তা-ও বিশ্লেষণ করেছেন তারা। ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এ সোমবার প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।

গত বছর ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কারও মৃত্যু হয়। এর পরে সীমান্ত পেরিয়ে উহান থেকে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।পার্থপ্রতিম জানান, পরীক্ষা করে দেখা গেছে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে ভাইরাসটির গঠনে।

প্রত্যেক ভাইরাসে ডিএনএ বা আরএনএ থাকে। সার্স-কোভ-২ আরএনএ ভাইরাস। এই জিনোমের গঠনে সামান্য অদলবদল ঘটে গিয়েই ভিন্ন চেহারা নেয় ভাইরাস। বাড়ায় সংক্রমণ ক্ষমতা।

নিজেদের বাঁচার জন্যই তাদের এই লড়াই। ভাইরাস স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য তাদের বাসা বাঁধতে হয় কোনও প্রাণীর শরীরে। এক্ষেত্রে যা মানুষ (অর্থাৎ মানুষের শরীরের বাসা বেঁধে বাচার চেষ্টা করছে করোনা ভাইরাস)।

গোটা পৃথিবী থেকে পাওয়া ভাইরাসটির আরএনএ সিকোয়েন্সের তথ্য থেকে তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখছিলেন নিধান ও পার্থপ্রতিম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের ৩,৬৩৬ জন করোনা -রোগীর দেহ থেকে ভাইরাস-নমুনার আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করেন তারা।

পার্থ জানান, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও নিজের চেহারা বদলেছে। এখনও পর্যন্ত ও, এ২, এ২এ, এথ্রি, বি, বি১-সহ মোট ১১ ধরনের ভাইরাস মিলেছে। এর মধ্যে চিনে প্রথম সংক্রমণ ঘটায় ও। সেটি মূল। বাকি ১০টি তৈরি হয়েছে সময়ের সঙ্গে -সঙ্গে । এর মধ্যে এখন সব চেয়ে সংক্রামক এ২এ। পার্থপ্রতিম বলেন, অবাক করা বিষয়, বেশির ভাগ ভৌগোলিক এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে দখল নিয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাসের এ২এ। এ২এ-র অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে ২৪ জানুয়ারি। মার্চ মাসের শেষের মধ্যে মোটামুটি অন্য সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ৬০ শতাংশ দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে এরাই।

নিধান জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় সব চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে এ২এ। আমাদের দেশে সেখান থেকে এ২এ এসেছে। আবার চীন থেকে এসেছে ও। ইরান থেকে এসেছে এথ্রি। তিনি বলেন, এ২এ এবং ও, দুটোই শক্তিশালী। তবে এ২এ বেশি শক্তি ধরে।

তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন দুই বিজ্ঞানী। সার্স-কোভ-২ তার চরিত্র অনুযায়ী ফুসফুসে ঢুকে সংক্রমণ ছড়ায়। ভাইরাসটির স্পাইকে থাকা প্রোটিন মানুষের ফুসফুসে থাকা এসিই২ প্রোটিনটিকে কাজে লাগিয়ে কোষের উপরিভাগে অ্যাঙ্কর করে বা জুড়েযায়। এর পরে ফুসফুসে উপস্থিত অন্য একটি প্রোটিন তাকে কোষের ভিতরে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। এ২এ-র ক্ষেত্রে তার স্পাইকে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডটি অ্যাসপারটিক অ্যাসিড থেকে বদলে গ্লাইসিন-এ পরিণত হয়। যা তার সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই দুই বিজ্ঞানী জানান, যেহেতু ভাইরাসটির মধ্যে এত পরিবর্তন ঘটছে, তাই ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভাইরাসটি সস্পর্কে পুরোপুরি জানতে না-পারলে প্রতিষেধক তৈরি হলেও তা সবার শরীরে কাজ করবে না। সেই কাজেই সাহায্য করবে নিধান ও পার্থপ্রতিমের গবেষণা, আশাবাদী দুই বাঙালি গবেষক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin